মুক্তিযোদ্ধা

মুক্তিযোদ্ধা

১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে যাঁরা অস্ত্র হাতে সরাসরি পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন কেবল তাঁদেরই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হয় তা নয়। সেই সঙ্গে অস্থায়ী মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রী, সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী, ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলোতে ত্রাণ বিতরণসহ যাঁরা বিভিন্ন সেবামূলক কাজে অংশ নিয়েছেন তারা, কোলকাতায় স্থাপিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের পরিচালকমণ্ডলী, সাংবাদিক, ভাষ্যকার ও শিল্পী, প্রমুখকেও মুক্তিযোদ্ধা হিসাব তালিকাবদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে যারা অস্ত্র হাতে মাঠ পর্যায়ে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন তাদের চার ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যথা:
(ক) তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, ইপিআর, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর নিয়মিত সদস্যবৃন্দ। এরা আগে থেকেই অস্ত্র ব্যবহারে এনমকী সম্মুখ সমরাভিযানে প্রশিক্ষিত ছিলেন। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এরা পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিলেন। এদের অধিকাংশই ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের ‘নিয়মিত বাহিনী’র সদস্য ছিলেন।
(খ) দ্বিতীয়ত: সাধারণ মানুষ যাঁরা বাংলাদশে ত্যাগ করে ভারতে গিয়েছিলেন এবং ভারতের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অস্ত্রচালনা, বিস্ফোরকদ্রব্যের ব্যবহার ও গেরিলাযুদ্ধের কলাকৌশলে প্রশিক্ষণ লাভের পর দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সেগুলো ব্যবহার করেছিলেন। সংখ্যাই এরাই সর্বার্ধিক। এদের বলা হতো ‘গণবাহিনী’। সামরিক প্রশিক্ষণের পরই এদের হাতে অস্ত্র ও গোলাবারুদ দেয়া হয়েছিল। এদের মধ্যে ছিলেন কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র সহ সমাজের নানা স্তরের মানুষ।
(গ) টাঙ্গাইলের বঙ্গবীর আব্দুল কাদেরর সিদ্দীকীর (বীর উত্তম) নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত কাদেরিয়া বাহিনীর লোকজন। এদের অধিকাংশই প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে যাননি। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ল্যান্স নায়েক কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে দেশের ভেতরই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন; এবং
(ঘ) কেবল ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী, যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে নতুনভাবে ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, কিন্তু দেশাভ্যন্তরে না-ফিরে বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধ করেছেন। এদের পৃথকভাবে নাম দেওয়া হয়েছিল ‘মুজিব বাহিনী’।

Thursday, September 22, 2011

বিএনপি তারেক-কোকো আর যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় হরতাল ডেকেছে: আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ


বিএনপি তারেক-কোকো আর যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় হরতাল ডেকেছে: আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ
 যুদ্ধাপরাধীদের জেল থেকে ছিনিয়ে আনার লক্ষ্যে জামাত কমান্ডো হামলা চালায়: সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম
২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ | ৭ আশ্বিন ১৪১৮
আওয়ামী লীগ নেতারা হরতালের নামে নৈরাজ্য ও সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে জনগণের জানমাল রক্ষায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে আজ হরতাল চলাকালে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়ে তারা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ায় বিএনপির মাথায় আগুন ধরে গেছে। জামায়াত উন্মাদ হয়ে গেছে। এ কারণেই যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় হরতাল ডেকেছে তারা। বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউর দলীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সমাবেশে নেতারা এসব কথা বলেন। সোমবার ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, অগি্নসংযোগ, ভাংচুরসহ গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে দেশে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। এই যুদ্ধে জয়ী হয়ে বাংলাদেশকে রাজাকারদের হাত থেকে আরেকবার স্বাধীন করতে হবে। তিনি বলেন, একাত্তরে ছেড়ে দেওয়া হলেও বিএনপির দোসর জামায়াতকে এবার ছেড়ে দেওয়া হবে না। সবকিছুর বিচার অবশ্যই করা হবে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাজারে সব জিনিস পাওয়া গেলেও দাম একটু বেশি থাকায় মানুষের কষ্ট হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানাই, দাম কমান। মানুষকে কষ্ট দিয়ে লাভ করার চেষ্টা করবেন না।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ায় বিএনপির মাথায় আগুন ধরে গেছে, জামায়াত উন্মাদ হয়ে গেছে। নিজামী-সাঈদীরা জেলে থাকায় এবং এক ছেলের বিচার শেষে আরেক ছেলের বিচার শুরু হওয়ায় খালেদা জিয়ারও ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এ কারণে দুর্নীতিবাজ ও একাত্তরের মানুষ হত্যাকারী জামায়াতকে বাঁচাতে খালেদা জিয়া হরতাল ডেকেছেন।
তিনি বলেন, হরতালে নৈরাজ্য ও সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের মোকাবেলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই যথেষ্ট। এর পরও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সব সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় এই সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
সাধারণ সম্পাদক এলজিআরডিমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, বিএনপির হরতালের কোনো ইস্যু নেই। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ নীতিনির্ধারক অধিকাংশ নেতার মতামত উপেক্ষা করে এবং জামায়াত ঘরানার বিএনপিপন্থি একটি দৈনিকের সম্পাদকের পীড়াপীড়িতেই খালেদা জিয়া এ হরতাল ডেকেছেন। এর সঙ্গে বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মীদের কোনো সম্পৃক্ততাও নেই। 'চাকরি' ও 'পদরক্ষা' এবং লোক দেখানোর জন্য হরতালে মাঠে না নামতে বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, এতে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। তিনি বলেন, সোমবার কোনো বিক্ষোভ মিছিল নয়, পূর্বপরিকল্পিতভাবে ও কমান্ডো স্টাইলে পুলিশ হত্যার উদ্দেশ্যেই জামায়াত রাজপথে নৈরাজ্য ঘটিয়েছে। এটি ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার থেকে রক্ষায় বিকল্প উপায়ে তাদের জেল থেকে বের করে আনার নির্লজ্জ চেষ্টা, যা দেশ ও জাতির জন্য অশনিসংকেত। তবে সরকার তার নৈতিক দায়িত্ব পালনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেই ছাড়বে।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, হরতালের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করবেন না। শেখ হাসিনার গণতান্ত্রিক সরকার গণতান্ত্রিক উপায়েই দেশ পরিচালনা করতে চায়। কিন্তু হরতালের নামে রাজপথে কেউ নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চাইলে সরকার তাদের কঠোরহস্তে দমন করবে। রাজপথে সজাগ থেকে অতন্দ্র প্রহরীর মতো এই নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের মোকাবেলা করতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, মাহবুবুল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এমপি, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, ফয়েজ উদ্দিন মিয়া, ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ এমপি, হাজী মোহাম্মদ সেলিম, শাহে আলম মুরাদ, আবদুল হক সবুজ, আসলামুল হক আসলাম এমপি, অ্যাডভোকেট সানজিদা খাতুন এমপি, সাহিদা তারেক দীপ্তি এমপি, সাইফুজ্জামান শিখর, আনিসুর রহমান আনিস, শেখ আনিস উজ জামান রানা প্রমুখ। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়।বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শ্রমিক লীগের হরতালবিরোধী বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, খালেদা জিয়ার দুই ছেলে তারেক-কোকো ও যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা এবং সরকারের সফলতা ম্লান করতেই বিএনপি হরতালের ডাক দিয়েছে। তবে হরতাল ও হুমকি-ধমকি দিয়ে কোনো কাজ হবে না। জাতির কাছে ওয়াদাবদ্ধ বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধী এবং ২০০১-০৬ সালের সব দুর্নীতির বিচার করবেই।

No comments:

Post a Comment